Categories
প্রবাস সাক্ষাতকার

”জার্মানির বহু এনজিও শিক্ষার্থীদের সুযোগ দিয়ে যাচ্ছে”

জার্মানিতে প্রবাস জীবনের অর্ধেকটা সময় বন শহরে কাটিয়ে দিয়েছেন তামান্না ইয়াসমিন। তার স্বামী আলবেরুনির সঙ্গে বিয়ের পর বন-রাইন-সিগ বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স করতে জার্মানিতে আসেন। তার স্বামী আলবেরুনি বর্তমানে জার্মানির একটি প্রতিষ্ঠানে প্রকৌশলী হিসেবে কাজ করছেন। দুজন মিলে বছর তিনেক আগে প্রতিষ্ঠা করেন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা টুমরো টুগেদার। নিজের সংগঠনের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি তামান্না ইয়াসমিন স্থানীয় রাজনৈতিক দলের সঙ্গেও যুক্ত। সীমান্ত ম্যাগাজিনের সঙ্গে আলাপে উঠে এসেছে টুমরো টুগেদার আর জার্মানির প্রবাস জীবন প্রসঙ্গ।

সীমান্ত: কী কারণে আপনারা টুমরো টুগেদার প্রতিষ্ঠা করলেন?

তামান্না ইয়াসমিন: বাংলাদেশে থাকাতেই আমি এনজিও এবং বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার সাথে বেশ সংযুক্ত ছিলাম। যেহেতু আমার পড়াশুনা এবং কাজের পরিধি বৈচিত্র্যময় ছিল, তাই আমি সারা বিশ্বের বিভিন্ন মানুষের সাথে কাজ করার এবং তাদের থেকে শেখার সুযোগ পেয়েছি। জার্মানিতে শিক্ষার্থী অবস্থায় আমি বনের কিছু সংস্থার সাথে সক্রিয় ছিলাম। এসব জায়গাতে আমি স্বেচ্ছাসেবক, ইন্টার্নশীপ, ও খণ্ডকালিন চাকরি করে জার্মানিতে এনজিও ব্যবস্থাপনায় অভিজ্ঞতা অর্জন করি। আমার সমস্ত কাজের অভিজ্ঞতা এবং নিকট বন্ধু ও সহকর্মীর অনুপ্রেরণায় ২০১৯ সালে একটি এনজিও প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি যার দ্বারা আমরা জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য বাস্তবায়নে অংশগ্রহণ করার লক্ষ্য স্থির করি।

সীমান্ত: এখন পর‌্যন্ত কেমন সাড়া পেয়েছেন এই সংগঠনের কাজ করতে গিয়ে?

তামান্না ইয়াসমিন: এ পর্যন্ত আমরা কিছু জাতীয় (জার্মান) ও আন্তর্জাতিক স্টেকহোল্ডার, দাতা-সংস্থার সাথে কাজ করেছি। আমাদের প্রকল্প-অংশীদার, লক্ষ্য-গোষ্ঠী এবং শুভাকাঙ্ক্ষীরা সবসময় আমাদের কাজের প্রশংসা করেছে। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, জার্মানির, জার্মান–পোলিশ ইয়ুথ নেটওয়ার্ক, এশিয়া-ইউরোপ ফাউন্ডেশন, ইউরোপিয়ান স্টুডেন্ট ইউনিয়ন র মত বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠানের সাথে আমরা ইতিমধ্যেবিভিন্ন প্রকল্পে সফলভাবে কাজ করেছি। জার্মানি ছাড়াও মরক্কো, জর্জিয়া, পোল্যান্ড, এস্তনিয়া, লিথুয়ানিয়া, সুইডেন, চেক-রিপাবলিক, তুরস্ক, জর্ডানের বিভিন্ন সংস্থার সাথে টুমরো টুগেদার বিভিন্ন প্রকল্পে অংশগ্রহণ করেছে। আমাদের এসব কাজে বাংলাদেশি বেশ কিছু শিক্ষার্থীও অংশ নিয়েছে এবং তারা আমাদের বিভিন্ন প্রকল্পে সম্পৃক্ত রয়েছে। এসব কাজ করতে গিয়ে আমরা জার্মানিতে অন্যান্য বাংলাদেশি সংগঠনেরও সহায়তা পাচ্ছি, যেমন হাউস ডের ইন্টেগ্রাতসিওন, সেরাজি ফাউন্ডেশন।

টুমরো টুগেদার এর সেমিনারে আগতরা ©TY

সীমান্ত: জার্মানির আমলাতান্ত্রিক জটিলতা নিয়ে অনেকেই সমস্যার সম্মুখিন হয়। টুমরো টুগেদার প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে আপনারা কি এই ধরণের কোন সমস্যার মুখে পড়েছেন?

তামান্না ইয়াসমিন: অফিসিয়াল নথি এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র প্রস্তুত করার সময় কিছু চ্যালেঞ্জ ছিল। প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল কোভিড-১৯ মহামারী। আমি ২০১৯ সালে টুমরো টুগেদার প্রতিষ্ঠা করার সিদ্ধান্ত নিলেও মহামারীর কারণে আমাদের প্রায় এক বছর দেরি হয়েছে। দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জ ছিল সব কাগজপত্র সঠিকভাবে জার্মান ভাষায় প্রস্তুত করা। ভাষার ব্যাপারে আমার বেশ কিছু জার্মান বন্ধু সহায়তা করেছেন। জার্মানির এনজিও নিবন্ধন প্রক্রিয়াটি বেশ সময়সাপেক্ষ। তবে আমার ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ হচ্ছে, জার্মান বিভিন্ন সরকারী প্রতিষ্ঠান যেমন বন জেলা কোর্ট ( Amtsgericht Bonn), জার্মান ট্যাক্স অফিস , আমাদের নথি পত্র সংশোধনের জন্য বিভিন্ন ধাপে বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছে যেগুলির জন্য আমরা তাদের কাছে কৃতজ্ঞ।

সীমান্ত: আগের চেয়ে এখন অনেক বেশি বাংলাদেশী ছাত্রছাত্রী জার্মানিতে আসছে পড়ালেখার জন্য। তারা অনেকেই এদেশের বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থাগুলোর সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী। তাদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?

তামান্না ইয়াসমিন: আমি বাংলাদেশি ছাত্রছাত্রী এবং নতুনদেরকে তাদের প্রকৃত আগ্রহগুলি খুঁজে বের করার জন্য বলব, যেন তারা তাদের সৃজনশীলতা ব্যবহার করে শিখতে পারে। জার্মানিতে অগণিত এনজিও বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ করছে যেখানে তারা শিক্ষার্থীদেরকে শিক্ষানবিশি, স্বেচ্ছাসেবা এমনকি খণ্ডকালীন চাকরিরও সুযোগ দিয়ে থাকে। আগ্রহী ছাত্রছাত্রীদের উচিত স্বপ্রণোদিত হয়ে এসব প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করা। জার্মান ভাষা অনেক ক্ষেত্রেই প্রয়োজনীয়, তবে আমার বাক্তিগত অভিজ্ঞতা বলে, শুধু ইংরেজির দক্ষতা দিয়েও জার্মানিতে অনেক কাজের সুযোগ পাওয়া যায়।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।