প্রায় এক ঘন্টা পর মিশকো ঘুম থেকে জেগে দেখে, ট্রেনের কামরায় উদ্বেগ মাখা মুখ নিয়ে বসে থাকা সহযাত্রী লাসলো ছাড়া আর কেউ নেই। চোখ ডলা দিয়ে ভালো করে তাকিয়ে দেখে – সেখানে আন্টন নেই। আবার অল্প বয়সী সেই মেয়েটিও নেই। তলপেটে চাপ অনুভব করে দ্রুত টয়লেটের খোঁজে বের হয়। টয়লেটের পাশে সে তরুণী ইউখেনিয়ার দেখা পায়। সে বিয়াসের বোতল হাতে সেখানে দাঁড়িয়ে টয়লেটের জানালার দিকে হা করে চেয়ে আছে। প্রথম ইউখেনিয়া তার দিকে সন্দেহ নিয়ে বাঁকা চোখে তাকায়, ঘাপটি মেরে লুকিয়ে থাকা জন্তুর মতো। অবশ্য হঠাৎ করে দুজনেই হেসে ফেলে। আর মিশকো চুপচাপ কামরা থেকে একটি হুইস্কির বোতল তুলে নেয়। তবে দরজা দিয়ে ঠিক বেরিয়া যাওয়ার আগমুহুর্তে একটু দাঁড়িযে লাসলোর দিকে বোতলটা এগিয়ে দেয়। সম্ভবত সে ওটা বেশ উপভোগ করতে পারে, যেমন গোবেচার আদলের লোকটা। তবে বেশ অনাগ্রহের সাথেই সে না করে।
মিশকো এবং ইউখেনিয়া হুইস্কির বোতল থেকে বেশ খানিকটা মদ ঢেলে গলা ভিজিয়ে নিল। এরপর ইউখেনিয়া ভাঙ্গা ভাঙ্গা ইংরেজিতে বলতে শুরু করে যে, আন্টন মাত্র অল্প আগেই ট্রেন থেকে নেমেছে। শুনে মিশকো কিছুটা হাল্কা বোধ করে। কারণ দুঃসাহসিক কিছু একটা ঘটানোর দিকে আন্টনের ঝোঁক নতুন নয়। সে যে মাঝেমাঝেই হুট করে এমন একাকী লাপাত্তা হয় যায় – সেটি তার জানা। ফলে সে নিশ্চিন্তেই ইউখেনিয়ার সাথেক মদের নেশায় মেতে উঠে। তবে ট্রেনের ঝাঁকুনিতে স্বর্গীয় ছবিগুলো বিলীন হয়ে যায়। মাথার মধ্যে এসব স্বর্গীয় রঙ্গীন দৃশ্যাবলীল জন্য যে তাদের একদিন চড়া দিম দিতে হবে – সে নিয় তাদের এখন কোন মাথা ব্যাথা নেই।
পরের দিন গির্জার সামনে এক মোটাসোটা বৃদ্ধ মহিলার মুখ থেকে দুঃখকষ্টের কাহিনী শুনছিলেন ভালোবাসার আক্ষেপে জর্জরিত সেই সহযাত্রী লাসলো। ধার্মিক মহিলাটিকে সে বলতে শুনে, করুণ বিয়োগান্তক ঘটনা কাকে বলে! অনুশোচনা – অনুতাপ কাকে বলে! তবে লাসলো জানতো যে, তার মতামত ভিন্ন রকম। আন্টন ভাল্লুকগুলো খুঁজে পায়। তবে মুহুর্তেই তারা ধারালো থাকা দিয়ে আঁচড় বসিয়ে দেয়। লাসলো বিরক্তির সাথে ভাবতে থাকে – না, না, আন্টন, এটা এমন কিছুই নয়। তার নিজের অপূর্ণ ভালোবাসার যন্ত্রণার তুলনায় এটা এমন কিছুই নয়। ভাবে আর মনে মনে প্রস্তুতি নেয়- সেই বেহালা বাদক মেয়েটিকে পাওয়ার শেষ সুযোগ কাজে লাগানোর জন্য।