Categories
ব্লগ লেখালেখি

পর্যটকদের ডাকছে বাংলাদেশের প্রকৃতি

তারেক মোরতাজা

গ্রামীণ মেঠো পথে ছুটে চলা কিশোরীর হাসিমাখা মুখ, বৌচি; কানামাছি খেলতে খেলতে হাসিতে লুটোপুটি খাওয়া আনন্দময় কৈশরের বিকালে মানুষের জীবনাচরণ- এখানে, বাংলাদেশে অনন্য।  

হলিডে কাটানোর জন্য তাই বাংলাদেশ হতে পারে যে কারো জন্য অসাধারণ গন্তব্য। এখানে আছে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার। মেরিন ড্রাইভ। সৈকত পাড়ের মানুষের আতিথ্য। 

বঙ্গপোসাগরের বুকে প্রবাল ঘেরা ছেড়াদ্বীপ। জনবসতি নেই। আছে প্রবালের বিচিত্র সমাহার। পাশেই সেন্টমার্টিন দ্বীপে মানুষের সারল্যমাখা জীবন। নীলাভ জলরাশির ফেনিল ঢেউয়ের উচ্ছ্বাস-মুখর সেন্টমার্টিন্স সমুদ্র সৈকত। ছেড়া দ্বীপে কালো প্রবালের রূপ-ঐশ্বর্য, শেষ বিকালের অস্ত যাওয়া সূর্যের সাথে নীড়ে ফেরা সীগালের ওড়াওড়ি পর্যটকের জীবনে যোগ করবে নতুন অভিজ্ঞতা।

পাহাড়ি জেলা বান্দরবানে পাথুরে খরস্রোতা সাঙ্গু নদীতে নৌকা ভ্রমণ।  নাফাখুম, তিন্দু, রেমাক্রি আর নীলগিরির পথে পথে পাহাড়ি জনপদের মানুষের হাসিমাখা অভ্যর্থনা, বিজয় তাজিংডংয়ের পথে পাহাড়ের উপর শান্ত বগা লেক ভ্রমণ অভিজ্ঞতাকে সমৃদ্ধ করবে। 

পাহাড়ি জেলা রাঙ্গামাটিতে রয়েছে এশিয়ার বৃহত্তম কাপ্তাই লেক। দেশের মিঠা পানির মাছের সবচেয়ে বড় উৎসের এই লেক জল পাহাড়ের অনন্য সমন্বয়।  

পাহাড়ি আরেক জেলা খাগড়াছড়িতে আছে রোমাঞ্চকর আলুটিলা গুহা । রিছাং ঝর্ণার জলের প্রশান্তি।  সাজেকের পথে পথে পাহাড়, নদী আর ঝর্ণার সৌন্দর্য। খাগড়াছড়িতে পাহাড়ি নৃগোষ্ঠী মারমাদের খাবার-বাঁশ করুল, কবুতর ফ্রাই, ব্যাম্বো চিকেনের বৈচিত্রময় স্বাদ ভোজন রসিকদের জীবনে স্মরণীয় ঘটনা হতে পারে। 

বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোাভ ফরেস্ট সুন্দরবনে দেখা মিলতে পারে রয়েল বেঙ্গল টাইগার। চিত্রা হরিণের নিশ্চিত দেখা মিলবে। সুন্দরী, গরান আর গোল পাতার  ফাঁকে ফাঁকে ছুটে চলা বানর, বন্য শুকর, সাপ আর পাখিদের মিতালী মন ভরিয়ে দেবে। 

বনে বেড়াতে গিয়ে  সমুদ্র সৈকত দেখারও সুযোগ আছে সুন্দরবনের কটকতায়-  জামতলা বিচে ইচ্ছে মত ভেজা যাবে, সান বাথ, বালি খেলায় নিজের মত করে কাটানো যাবে সময়।  নিভৃত এ সৈকত পর্যটকদের জন্য সব মওসুমেই নিরাপদ এবং আনন্দময় অভিজ্ঞতা দেয়ার দরজা খুলে রেখেছে। সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ডের অবস্থানও এ সুন্দরবনে।

কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে একই স্থান থেকে সূর্যোদয় ও অস্ত দেখার সুযোগ রয়েছে। কাঁকড়ার চরে  হাজার হাজার লাল কাঁকড়ায় ছেয়ে যাওয়া সকালটা অনন্য। সৈকত-সংলগ্ন বাজারে লাল কোরাল, তপসে সহ জিভে জল আনা নানা পদের সামুদ্রিক মাছের স্বাদ নেয়া যাবে। রাখাইন নৃ-গোষ্ঠীর সংস্কৃতি, ফাতরার বনে একটা বিকাল এবং ভরা পূর্ণিমার আলোয় উজ্জ্বল সৈকত মুগ্ধতা  রেখে যাবে সারাজীবন। 

স্থানীয় অধিবাসীদের আতিথ্য আর তিনা ঘুঘু ও চিত্রা হরিণের বিশাল সমাহার নিয়ে নোয়াখালী জেলার নিঝুমদ্বীপ অপেক্ষা করে ভ্রমণ পিপাসু সৌখিন মানুষদের জন্য। এখানে গ্রামীণ জনপদের মানুষের জীবন যাত্রাও অন্যরকম। চৌধূরীর খালে এক বিকালের নৌ ভ্রমণ আর গরুর দুধের টাটকা মিষ্টির কথা পর্যটকদের মনে থাকবে বহুদিন।

মৌলভীবাজারের মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত, শ্রীমঙ্গলে চা বাগান, হামহাম ঝরণা, রিজার্ভ ফরেস্ট, মাধবপুর লেক, সিলেটের জাফলং ও হাওরের বৈচিত্র এক কথায় অসাধারণ। সিলেটের গোয়ইঘাটেই রয়েছে দেশেল একমাত্র মিঠাপানির জলজ বন রাতার গুল। আছে বিছানাকান্দি- যেখানে পাথুরে নদী ও হাওর  মিতালী করে বয়ে যাচ্ছে নিরবধি।

সময় করে একবার হলিডে কাটানোর জন্য আসতে পারেন বাংলাদেশে। উপভোগ করতে পারেন  প্রকৃতির ঐশ্বর্য। উপভোগ করুণ জীবনের অনন্য অবকাশ।