সীমান্ত: প্রবাসে ইন্টেগ্রেশন বলতে আপনার কাছে কী মনে হয়?
মারুফ আহমেদ: ইন্টেগ্রেশন আমার কাছে বেশ ইন্টারেস্টিং একটা ব্যাপার মনে হয়। কারণ এটা ছাড়া একটা দেশকে চেনা যায় না, সেদেশের মানুষকে চেনা যায় না। অনেকেই বিদেশের এই সমাজকে এড়িয়ে চলতে চান যেটা আমার কাছে ভালো ঠেকে না। আমার বাবা বলতেন, when im in Rome, Im a Roman. তাই ইন্টেগ্রেশনের প্রয়োজন আছে। তবে আপনাকে কেউ হাত বাড়িয়ে তুলে নিচ্ছে নাকি ফেলে দিচ্ছে, এই ব্যাপারটা সব দেশেই আছে। আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি বেশিরভাগ মানুষই আমাদের পছন্দ করে। আমি যখন ১৯৭৬ সালে জার্মানিতে আসি তখন মাত্র দেশ স্বাধীন হয়েছে। আমার মনে আছে তখন দূর দূরান্ত থেকে অনেকেই আসতো জানার জন্য কীভাবে আমরা এত বড় একটা ঘটনা ঘটিয়ে ফেললাম।
ইন্টেগ্রেশনের পেছনে আবার একটা রাজনৈতিক ব্যাপারও আছে। এখানে পূর্ব পশ্চিমের ব্যাপার আছে তবে সেটাকে ইস্যু তৈরি করার কোন মানে হয় না। এটা ঠিক, এখানে পেগিডার মত সংগঠনও আছে। তবে বর্ণবাদ কিন্তু অন্য দেশেও আছে।
সীমান্ত: প্রবাসী বাংলাদেশীরা এই সমাজে কীভাবে অবদান রাখতে পারে?
মারুফ আহমেদ: আমার মনে হয় বাঙালীরা বেশ মেধাবী এবং উচ্চাভীলাষী। তবে সমস্যা হলো, তারা সব জায়গাতে শুধু নিজেদের মধ্যেই থাকতে চায়। এরপরও বাঙালীরা কিন্তু অনেক জায়গায় অবদান রাখছে। অনেকেই এই দেশে এসে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করছে, পিএইচডি করছে, গবেষণা করছে। বাঙালীর এই মেধার মর্যাদা কিন্তু আমাদের দিতে হবে। তবে সব কিছুর মত এখানেও ইতিবাচক আর নেতিবাচক দিক রয়েছে।
সীমান্ত: কী ধরণের সমস্যা আপনি দেখেন? ভাষাগত সমস্যা নাকি অন্য কিছু?
মারুফ আহমেদ: প্রায় ক্ষেত্রেই দেখা যায় ভাষাটা এ ক্ষেত্রে সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ ভাষা না জানলে কোন দেশকে জানা যায় না, মানুষকেও চেনা যায় না। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর দেখেছিলাম এক ওলন্দাজ কুটনীতিক বাংলায় কথা বলছে, যেটা দেখে আমার খুব গর্ব লাগছিলো যে একজন বিদেশী আমার ভাষাটা বলছে। তার সুবিধা ছিলো তিনি সব জায়গাতে যেতে পারতেন যেটা অন্যরা পারতো না। সুতরাং আমি যদি এই দেশে এসে এখানকার ভাষাটাকে অবজ্ঞা করি তাহলে কিন্তু কিছু হলো না।
সীমান্ত: প্রবাসে বাংলাদেশীদের যে নতুন প্রজন্ম জন্ম নিয়েছে ভিন্ন সংস্কৃতির মধ্যে তার সঙ্গে দুই প্রজন্মের সেতুবন্ধনটা কীভাবে হতে পারে?
মারুফ আহমেদ: আমার নিজের স্ত্রী জার্মান হলেও আমি চেষ্টা করি আমার ছেলেমেয়ের সঙ্গে মাঝে মধ্যে বাংলা বলতে। তারা বাংলা বুঝলেও তেমন বলতে পারে না। প্রবাসী বাংলাদেশীদের ছেলে মেয়েরা এই দেশের স্কুলে যায়, তাদের পড়াশোনা, চলাফেরা সবই জার্মান ভাষাতে হয়। তারা একদম ভিন্ন একটি সংস্কৃতিতে বড় হয়। তাই তাদের জোর করে কোন কিছু করানো যাবে না। তাদের বোঝাতে হবে।
আবার কেউ কেউ আছে যারা তাদের নিজেদের শেকড়ের মধ্যেই থেকে যায়। যদিও তারা এখানে বড় হয় কিন্তু তাদের সবকিছুই বাংলার মধ্যেই থেকে যাচ্ছে। সেটাও ঠিক নয়। তাই আমার মতে দুটি দিকই ধরে রাখলে ভালো হয়।
সীমান্ত: জার্মানিতে এত বছর ধরে থাকছেন, বর্ণবাদের মত কোন ঘটনার মুখোমুখি হয়েছেন?
মারুফ আহমেদ: না, সেরকম অকাট্য কোন ঘটনা আমার বেলাতে ঘটেনি। তবে দুই জার্মানির একত্রীকরণের পর যখন পূর্ব জার্মানিতে সফর করতে যাই তখন কিছুটা বিরুপ পরিস্থিতির শিকার হয়েছিলাম। সাবেক পূর্ব জার্মানরা একটি বদ্ধ পরিবেশের মধ্যে কাটিয়েছে। যার ফলে তাদের মধ্যে বিদেশীদের সম্পর্কে কিছুটা নেতিবাচক ধারণা রয়েছে। তারা ভিনদেশীদের এখনও ততটা আপন করে নিতে পারেনি।