হাজার মাইল দূরের বিদেশে বাঙালী খাবারের স্বাদ নেওয়াটা যেন এক ধরণের বিলাসিতার নামান্তর, তাই রেস্তোঁরার নামটাও ভোজন বিলাস। ভোজন রসিক বার্লিন প্রবাসী বাঙালী আবু হানিফ তার রেস্তোঁরার নাম আর নানা স্বাদের পদ দিয়ে বাংলাদেশকে তুলে ধরছেন জার্মানদের কাছে।
সেই দুই জার্মানি আলাদা থাকতে ১৯৮৬ সালে এই দেশটিতে পাড়ি জমান। বয়সে তখনও টিনেজার, কিন্তু বিদেশের অচেনা পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নিয়েছেন আবু হানিফ। জার্মান ভাষা শিখে মাত্র ১৫ বছর বয়সে জার্মানির স্কুল থেকে পাশ করে পরে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ করেন প্রযুক্তি বিষয়ে। তারপর পড়াশোনা শেষে বছর দুয়েক চাকরিও করেছেন। তবে চাকরি ছেড়ে দিয়ে শেষ পর্যন্ত ব্যবসার দিকেই ঝুঁকে পড়েন।
বিগত ১৯৯৭ সালে আরও অনেক বাঙালির মত তিনিও রেস্তোঁরা খোলেন। শুরুতে মেক্সিকান রেস্তোঁরা চালু করেন তিনি। সীমান্ত ম্যাগাজিনের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে আবু হানিফ জানান, বার্লিনে মেক্সিকান রেস্তোঁরার প্রচলন কিন্তু আসলে বাঙালীদের হাত ধরেই। এতগুলো বছর পরেও নামকরা মেক্সিকান রেস্তোঁরার কুকরা বেশিরভাগই বাঙালী।
তবে বছর দশেক আগে সিদ্ধান্ত নেন, আর নয় বিদেশী খাবার। এবার নিজের দেশের খাবারকে মানুষের সামনে তুলে ধরতে হবে। তাই মেক্সিকান রেস্তোঁরা বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তার বদলে খাঁটি দেশী খাবারকে সামনে নিয়ে নতুন রেস্তোঁরা চালু করেন, নাম দেন দয়াল ভাণ্ডার। তার কিছু দিন পর নাম বদলে দেন ভোজন বিলাস। আবু হানিফ বলেন, নতুন রেস্তোঁরা চালুর সময় আমার অনেক বন্ধুই বলেছিলো বাংলা খাবারের বদলে ইন্ডিয়ান খাবারের নাম দিয়ে রেস্তোঁরা চালু করতে। কিন্তু আমি বলেছি ইন্ডিয়ান খাবার চললে বাংলা খাবার চলবে না কেন? আমাদের খাবার তো কম সুস্বাদু নয়।
সাহস করে বাংলা খাবারকে এভাবে পরিচিত করে তোলার উদ্যোগ নিলেও বড় ধরণের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছে প্রবাসী আবু হানিফকে। বিদেশের মাটিতে জার্মানদের কাছে বাংলা খাবারকে আলাদা করে পরিচিত করাটা বেশ কঠিন ছিলো। হানিফ বলেন, শুরুর দিকে এমনও দিন গেছে যেদিন মাত্র পাঁচ-দশ ইউরোর বেচা বিক্রি হয়েছে। কিন্তু ভাই হাল ছাড়িনি। গত দশ বছরে আমার যা টার্গেট ছিলো তার প্রায় অর্ধেক আমি অর্জন করেছি। আমার উদ্দেশ্য ছিলো এদেশের মানুষের কাছে আমাদের দেশের স্বাদকে পরিচিত করে তোলা। আমি প্রতিদিন তৈরি করা খাবার কাস্টমারদের সার্ভ করি। আমার জার্মান কাস্টমাররা খাবার খেয়ে বলে এটার স্বাদ অন্যান্য ইন্ডিয়ান রেস্তোঁরার চেয়ে অনেক ভিন্ন।
দেশের কথা ভেবে আর্থিক ক্ষতি মেনে নিয়ে ভোজন বিলাস চালিয়ে যাচ্ছেন আবু হানিফ। পাশাপাশি প্রবাসী কমিউনিটিতেও তিনি নানা সামাজিক কাজে জড়িত। এর ফলে দিন দিন তাঁর রেস্তোঁরা বেশ পরিচিত হয়ে উঠছে। জার্মানির অনেক শহরে বাঙালীদের কাছে ভোজন বিলাসের কথা শোনা যায়। এখানে মাছ-মাংস, ডাল-ভাত তো আছেই, আরও আছে প্রায় ৩০ পদের ভর্তা-ভাজি। বার্লিনের বাংলাদেশী কমিউনিটির নানা অনুষ্ঠানও হয়ে থাকে এই রেস্তোঁরাটিতে আর এতে সব সময় দেশী খাবার পরিবেশন করা হয়। সাড়ে তিনশ বর্গমিটারের রেস্তোঁরাটিতে দেড় থেকে দুইশ লোকের আয়োজন করা সম্ভব বলে জানান ভোজন বিলাসের প্রতিষ্ঠাতা আবু হানিফ। তাহলে আর দেরি কেন, এই বিদেশেও যদি পেতে চান দেশি করলা ভাজি কিংবা টাকি মাছের ভর্তার স্বাদ তাহলে ঘুরে আসুন বার্লিনের গোজলারার প্লাৎস-এ অবস্থিত ভোজন বিলাস রেস্তোঁরা।