Categories
প্রবাস সাক্ষাতকার

“বাঙ্গালী নারী যখন সাজতে চায় তখন শাড়িটাই পড়ে”

মেহজাবিন তানভির ভালবাসেন শাড়ী পড়তে। বাংলাদেশ থেকে এতদূরে বাস করলেও দেশের পোশাকের প্রতি তার ভালোবাসা এতটুকুও কমেনি। তাই জার্মানিতে তিনি গড়ে তুলেছেন নিজস্ব দেশী পোশাকের অনলাইন দোকান শাড়ি মার্কট। ”পশ্চিমা পোশাক পরতে আরাম লাগে সেটা সত্যি। কিন্তু আমরা বাঙ্গালী নারীরা যখন সাজতে চাই তখন শাড়িটাই পড়ি। মনে হয় শাড়িতেই আমাকে বেশি সুন্দর লাগে। শাড়ি পড়লেই একটু সাজগোজ করতে ইচ্ছা করে। যেটা পশ্চিমা পোশাকের বেলাতে হয় না।”

স্বামী আর তিন সন্তান নিয়ে জার্মানির ফিয়ার্জেন এলাকাতে বাস করছেন মেহজাবিন তানভির। অনেক প্রবাসী নারীর মত তিনিও শুধু স্বামী আর সংসার নিয়ে পড়ে থাকেননি। দেশে থাকতে পড়াশোনা করেছেন কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে। কিন্তু সন্তানদের লালন পালন করার চিন্তা করতে গিয়ে আর চাকরির দিকে যাননি। তার বদলে স্বামী রিয়াদ তানভিরের উতসাহে শুরু করেন অনলাইনে বেচা বিক্রির ব্যবসা। বিগত ২০১৫ সালে গড়ে তোলেন অনলাইনে দেশী পোশাকের দোকান শাড়ি মার্কট। ”আমার এখানে শুধু শাড়ি না, মেয়েদের সেলোয়ার কামিজ, ছেলেদের পাঞ্জাবী এমনকি বাচ্চাদের কাপড়ও বিক্রি হয়। ক্রেতারা অনলাইনে অর্ডার করলেই আমরা পাঠিয়ে দিই। তবে অনেক ক্রেতা আছেন নিজে এসে কাপড় পছন্দ করে যান”, বলেন মেহজাবিন তানভির।

Mahjabeen Tanveer ©RT

এই উদ্যোগে কেমন সাড়া পাচ্ছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমার কাস্টমারদের মধ্যে অনেক দেশের মানুষই আছে। বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানের মানুষ তো আছেই এমনকি অনেক জার্মানও আগ্রহ দেখান আমাদের পোশাকের জন্য। সেদিক থেকে আমরা ভালো সাড়া পাচ্ছি।” প্রবাসী বাঙ্গালীরা নানা উপলক্ষে দেশী পোশাক পরতে পছন্দ করেন বলে জানান তিনি। ”আগে তাদের অনেকে দেশ থেকে পোশাক আনিয়ে নিতেন, এখন তারা সরাসরি আমার কাছ থেকে কিনতে পারেন। এজন্য তাদের সময় এবং খরচও বেঁচে যায়।”

জার্মানিতে এসেছেন দুই দশকের বেশি সময়। এই সময়টাতে জার্মানির ভাষা এবং রীতি নীতি শিখতে হয়েছে। এক সময় এই দেশটাকে ভালো লাগতে শুরু করে। এখন জার্মান সমাজেই নিজেকে বেশি সাবলীল মনে হয়। কিন্তু বাঙ্গালী সংস্কৃতি তো ঢুকে আছে রক্তের মধ্যে, সেটা কীভাবে যাবে? তাই একসময় শুরু করেন নাটকঅনলাইন নামের একটি ওয়েবসাইট যেখানে দেশের সব ধরণের নাটক দর্শকরা ফির বিনিময়ে দেখতে পেতেন। তবে ব্যক্তিগত ব্যস্ততা বেড়ে যাবার কারণে কয়েক বছর পর অবশ্য সেটা বন্ধ করে দিতে হয়। কারণ ব্যবসার পাশাপাশি বাঙ্গালী কমিউনিটির বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন মেহজাবিন তানভির। এজন্য কমিউনিটির মধ্যে তিনি বেশ পরিচিত এক মুখ।

সংসার এবং ব্যবসার সঙ্গে এতকিছু কীভাবে সামলান?, সে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আমার স্বামী এক্ষেত্রে সবসময় সাহায্য করেছে। আমি যে কোন উদ্যোগ নেওয়ার চেষ্টা করলে সে সবসময় আমার পাশে থেকেছে, উতসাহ যুগিয়েছে। আমার আশেপাশের মানুষও আমাকে উতসাহ দিয়েছে। আমার বন্ধুরা বলে আমি নাকি খুব সুন্দর করে কথা বলতে পারি আর আমারও চয়েসও নাকি খুব ভালো!” হেসে বললেন প্রবাসী নারী মেহজাবিন তানভির।