কাওসার খায়রুল আলম
সালটা ১৯৭৭। বয়স তখন আমার মাত্র ২৩। জার্মানি সম্পর্কে কোন ধারণা ছিল না। দেশটা কোথায় সেটাও জানতাম না। কিন্তু একদিন জানতে পারলাম ভিসা ছাড়াই জার্মানিতে যাওয়া যাবে। শুধু বিমানের টিকিট কেটে সেদেশে নামতে পারলেই হলো, কোন ভিসার দরকার নেই। শুনে প্রথমে খুব অবাক হয়েছিলাম। সবাই তো জানি লন্ডন যায়, জার্মানিতে কেন? তারপরও জার্মানিও তো বিদেশ, তাই শেষ পর্যন্ত টিকিট কেটে ঢাকা থেকে সোজা ফ্রাংকফুর্ট চলে আসলাম। সেখান থেকে বনে, কারণ বন তখন পশ্চিম জার্মানির রাজধানী। তখনকার বাংলাদেশ দুতাবাস ছিল বনের বাড গোডেসব্যার্গ এলাকাতে। এছাড়া আমার পরিচিত একজন থাকতো এই এলাকাতে।
দেশ থেকে তখন নিয়ে এসেছিলাম ৩০০ ডলার। সাথে ছিল আমার এক খালাতো ভাই। দুইজনে একসঙ্গে জার্মানিতে এসেছি। তারপর বাড গোডেসব্যার্গ এলাকাতে এসে নামলাম। কিন্তু এখন যাবো কোথায়? পরিচিত যে ছিল তার সঙ্গে যোগাযোগ করলাম, কিন্তু সেও পাশ কাটিয়ে চলে গেল। এদিকে আমরা রাস্তায় মালপত্র নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। এদেশে কাউকে চিনি না, কোন কিছু জানি না। শেষ পর্যন্ত আমাদের দেখে একজন বাঙ্গালীর দয়া হল। সে আমাদেরকে এখানকার স্থানীয় কাইজারহফ হোটেলে নিয়ে গেল। হোটেলের মালিক তার বাড়িকে হোটেল বানিয়ে ভাড়া দিয়েছে। সেখানে আরও বেশ কয়েকজন বাঙ্গালী থাকে দেখলাম।
এদিকে ক্ষিদেয় পেট তখন চুচু করছে। প্রায় ২৪ ঘণ্টা ধরে কিছু খাইনি। যে হোটেলে উঠেছি সেখানেই দেখলাম বাঙ্গালীরা খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন করতো। রাতের বেলা দেখলাম সবাইকে অল্প একটু ভাত আর মুরগীর মাংস দিল। আমার ছিল ভাত খাওয়ার অভ্যাস। ক্ষুধা পেটে তাই গ্রোগাসেই সব খেয়ে ফেললাম। ভাত আরও খাওয়ার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু বাকিরা দেখলাম অতটুকু ভাত খেয়েই উঠে গেল। তাই আমিও তাদের সঙ্গে উঠে গেলাম।
এখন ভাবছি কোথায় থাকবো। বাড়িওয়ালা একটা রুম দেখিয়ে বললো এখানে থাকা যাবে। প্রতি রুম ৩০ মার্ক। আমিও রাজি হয়ে গেলাম। রুমের ভেতর ছিল দুটি বিছানা। রাতের বেলা খালাতো ভাইকে অন্য বিছানায় দিয়ে আমি এই বিছানায় আরামসে ঘুমালাম। সকালে এসে বাড়িওয়ালা ৬০ মার্ক চাইলো। বললাম, কেন? সে বললো তুমি একা থাকলে তো দুইটা বিছানা নষ্ট হতো না। তাই ৬০ মার্ক দাও! ভাবলাম, তাই তো, এটা তো মাথাতেই আসে নাই! যাই হোক অবশেষে বাংলাদেশ দুতাবাসের কল্যানে গোডেসব্যার্গ এলাকাতে একটা বাসা খুজে পেলাম। সেখানেই আপাতত থাকার জায়গা হলো। আর এভাবেই শুরু হলো আমার জার্মানির জীবন।