Categories
কবিতা লেখালেখি

নব্য দাস

হোসাইন আব্দুল হাই

কোন কালো মাটি থেকে
গড়ারে তোর সুরতখানা
কোন কালো কয়লা দিয়ে
পোড়ান তোর দেহ?
এমনতর চেহারা নিয়ে
শখ জাগে তোর
সং সাজার?
 
যতই লাগাস কাদা মাটি
থাকবিরে তুই
আঙ্গাল-বাঙ্গাল।
শিক্ষাদীক্ষা বেশ করেছিস
গাঁয়ের ফুটো পাঠশালায়
সেই দিয়ে কি সভ্য দেশে
করবি রে তুই দীক্ষার বড়াই?
 
জন্ম তো সেই মাটির ঘরে
দক্ষিণের এক কুঁড়ে চালায়
পান্তা আর কচু ভর্তা
এই ছিল তোর খাবার-দাবার।
লুঙ্গি আর গামছা ছাড়া
জুটতো না তো
গায়ের কাপড়।
 
কোন সে এক চাষার দেশে
কাদা মেখে জলে ডুবে
কাটিয়েছিস রঙিন শৈশব।
হাঁস-মুরগি আর ছাগল ছানা
এই ছিল তোর খেলার সাথী
তাই দিয়ে কি হয় কখনও
রোবট-রকেট-জাহাজ গড়া?  
 
চামার কুমার ছুতার মেথর
এসব পেশাই চেনা-জানা
এর বেশী তো আর কখনও
হয়নি তোর জানাশোনা।
বকলমের লেখাপড়া
তা দিয়ে তো চলে না রে
আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন দেখা।
 
ঘাস কাটবি, পাতা কুড়াবি
এসব কিছু মানায় শুধু
তোর মতো এই চাষাভুষার।
সাদা দেশের সাদা ঘরে
যায় না রে তোর বেশভুষা
যায় না রে তোর আচার-বিচার
যায় না রে তোর মনন-শীলন।
 
নাম না জানা বিভূঁই থেকে
এসেছিস এক সভ্য পাড়ায়
এই পাড়ায় ভব্য হতেই
পার হবে তোর কয়েক জনম।
কয়েক জনম পরেই না তুই
বুঝবি রে তুই তোর পরিচয় -
এই সমাজের ‘নব্য দাস’।