Categories
প্রবাস সাক্ষাতকার

দেশের ক্রিকেটের মায়া বিদেশেও

ক্রিকেট জার্মানদের কাছে প্রায় অপরিচিত একটি খেলা হলেও দিন দিন তা এই দেশটিতে ছড়িয়ে পড়ছে। আর এর পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করছে দক্ষিণ এশিয়া থেকে আগত প্রবাসীরা। তাদের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশীরাও। খেলোয়াড় এবং ক্রিকেট কর্মকর্তা হিসেবে তারাও জার্মানদের কাছে খেলাটিকে তুলে ধরছেন।

ছোটবেলায় বাংলাদেশ থেকে পরিবারের সঙ্গে জার্মানিতে পাড়ি জমান কাওসার খান। বন শহরের অন্যতম সফল ক্লাব রাইনল্যান্ড রাইডার্স এর ক্যাপ্টেন তিনি। বছর তিনেক আগে কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে ক্লাবটি প্রতিষ্ঠা করেন। ক্রিকেট তার কাছে অনেকটা নেশার মত। সীমান্ত ম্যাগাজিনকে দেওয়া সাক্ষাতকারে কাওসার জানান, ছোটবেলা থেকেই আমি খেলাধুলার সঙ্গে পরিচিত, কারণ আমার বাবা নিজে ঢাকাতে মোহামেডান ক্লাবে ফুটবল খেলেছেন। স্কুলে পড়ার সময় আমাদের পাড়াতে একবার স্কুল ক্রিকেট লীগ চালু হয়। তখন দেখতাম বড়রা ক্রিকেট পিচ তৈরি করছে, ব্যাটিং বোলিং প্র্যাকটিস করছে। আমাদের ছোটদেরও সেখানে মাঝে মধ্যে বোলিং করার সুযোগ মিলতো। স্কুল লীগ নামের ওই টুর্নামেন্টে আমার এক মৌসুম খেলার সুযোগ হয়। এরপর যখন পরিবারের সঙ্গে জার্মানিতে চলে আসি তখন আর ক্রিকেট খেলা হয় নি।“

Cricket Mannschaft in Bonn
ছবি: কাওসার খান

জার্মানিতে স্কুলে পড়ার সময় ক্রিকেটের সঙ্গে কাওসারের সাময়িক বিচ্ছেদ ঘটে। তবে ক্রিকেটের প্রতি তার ভালোবাসায় কোন ছেদ পড়েনি। বিগত ২০০৮ সালে ইন্টারনেটেই ঘাঁটাঘাঁটি করে হঠাৎ করে খুঁজে পান বনের গোল্ড স্টার নামে একটি ক্রিকেট ক্লাবের যেটি মূলত প্রবাসী পাকিস্তানীদের একটি ক্লাব। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন, তার আগ্রহ দেখে তাকে দলে নিতে দেরি করেনি ক্লাবটি। কাওসার বলেন, “শুরুতে ক্লাবের সংখ্যা খুব একটা বেশি ছিলো না। তখন আমরা সাদা পোশাক পরে খেলতাম। আশেপাশের লোকজন দেখে বুঝতে পারতো না আমরা কী খেলছি, কিন্তু গত দুই বছর ধরে লোকজন আস্তে আস্তে তারা বুঝতে পারছে আর আমরাও এখন রঙ্গীন পোশাক পরে ক্রিকেট খেলছি। অনেক জার্মান কিশোরও মাঝে মধ্যে আমাদের সঙ্গে খেলতে আসে।“

সাম্প্রতিক সময়ে জার্মানির গণমাধ্যমে ক্রিকেট নিয়ে বেশ আগ্রহ তৈরি হয়েছে। তার পেছনের মূল কারণ আফগানিস্তান থেকে আসা শরণার্থীদের ক্রিকেটের প্রতি আগ্রহ এবং তাদের কারণে দিন দিন ক্রিকেট ক্লাবের সংখ্যা বেড়ে চলা। এর ব্যতিক্রম নয় রাইনল্যান্ড রাইডার্স ক্লাবও। দলটিতে বেশ কয়েকজন তরুণ আফগান শরণার্থী রয়েছেন। ক্লাব ক্যাপ্টেন কাওসার বললেন, “ক্রিকেট এখানে একটা কালচারের মত হয়ে গেছে, কারণ একই দলে অনেক দেশের মানুষ খেলতে আসে। আমাদের দলে বেশ কিছু আফগান শরণার্থী রয়েছে তাদের আমরা সাহায্য করে থাকি জার্মান শেখার বেলাতে। তাছাড়া তাদের কোন কাজে দোভাষীর প্রয়োজন হলে আমরা তাদের সঙ্গে সেখানে যাই। আমাদের দলের যে ফি আছে সেটাও তাদের দিতে হয় না।“

Cricketspieler Kawser Khan
ছবি: কাওসার খান

বন শহরে বর্তমানে পাঁচটা নিবন্ধিত ক্লাব রয়েছে। তার মধ্যে তিনটি ক্লাব জাতীয় পর্যায়ে এবং দুটি ক্লাব স্থানীয় লীগে খেলে থাকে। ক্রিকেটকে অদূর ভবিষ্যতে জার্মানিতে আরও পরিচিত করে তোলা সম্ভব বলে মনে করেন কাওসার খান। খেলার পাশাপাশি তিনি ক্লাবের সেক্রেটারি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করে থাকেন। সেজন্য তাকে নিয়মিত জার্মানির ক্রিকেট বোর্ড এবং স্থানীয় বন শহর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলতে হয়। এক্ষেত্রে নিজের অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে কাওসার বলেন, “যখন আমরা কর্তৃপক্ষের কাছে যাই অনেকেই বুঝে না ক্রিকেটটা কী জিনিষ, তখন তাদেরকে ব্যাখ্যা করে বলতে হয়। তারা তখন বুঝতে পারে এবং আমাদের সবসময়ই সহযোগিতা করে থাকে।“