বিদেশে বহু বাঙালী রয়েছেন যারা গবেষণাসহ নানা পেশাতে নিজেদের অবদান রেখে চলেছেন। এসব নিভৃতচারী মানুষগুলো তাদের মেধার কারণে নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে স্বদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করে তুলেছেন। তেমন একজন মানুষ ড. সিরাজুল ইসলাম।
সেই ষাটের দশকে ভারতের প্রখ্যাত সেন্ট্রাল ইন্সটিটিউট অফ মাইনিং অ্যান্ড ফ্যুয়েল রিসার্চ থেকে ডক্টরেট করেন সিরাজুল ইসলাম। তারপর জার্মানির বিখ্যাত হুমবোল্ট ইন্সটিটিউটের বৃত্তি নিয়ে পোস্ট ড্কটরেট করেন। এরপর ভারতে ফিরে গেলেও কিছুদিন পরেই জার্মানির বোখুমের মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় তাকে শিক্ষকতার চাকরির প্রস্তাব দেয়। সেই প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে আবারও জার্মানিতে ফেরেন তিনি। তারপর সৌদি আরবের কিং ফয়সাল মেডিকেল ইন্সটিটিউটে শিক্ষকতা করেছেন বছর দুয়েক। সবশেষে ড্যুসেলডর্ফের পরিবেশ রক্ষা ইন্সটিটিউট থেকে শিক্ষকতা শুরু করেন এবং প্রায় দুই দশক আগে চাকরি জীবন শেষ করেন। এখন স্ত্রী গিজেলা ইসলামকে নিয়ে অবসর জীবন যাপন করছেন। তার তিন ছেলে মেয়ে সকলেই নিজ কর্মক্ষত্রে প্রতিষ্ঠিত। জার্মানির প্রবাসী বাঙালী কমিউনিটির ভালো কোন উদ্যোগ দেখলে ভীষণ খুশি হন এই বিজ্ঞান গবেষক। তাদের যে কোন আয়োজনে ছুটে যান, প্রবাসীদের অনুপ্রাণিত করার চেষ্টা করেন। সীমান্ত ম্যাগাজিনের সঙ্গে কথোপকথনে তাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো দীর্ঘ প্রবাসী জীবনে জার্মানদের কোন জিনিষটা তার সবচেয়ে ভালো লেগেছে?
সিরাজুল ইসলাম: আমি আমার সহকর্মীদের কাছ থেকে সবসময় খুব ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া পেয়েছি। তারা সবক্ষেত্রে আমাকে সহযোগিতা করেছে। এছাড়া এদেশে সবকিছু একেবারে পরিকল্পনা অনুযায়ী চলে। আমি যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণায় জড়িত ছিলাম তখন আমাকে আমার গবেষণার পরিকল্পনা দুই বছর আগেই জমা দিতে হতো। এতে লাভ হতো, বাকিদের চেয়ে আমরা এগিয়ে থাকতাম। গবেষণার ক্ষেত্রে মনে হয়েছে এদেশের মানুষ আমাদের চেয়ে অনেক বেশি উদারমনা।
সীমান্ত: এতগুলো বছর পর জার্মানিতে থাকার পর কি নিজেকে ইন্টেগ্রেটেড বা সমাজভুক্ত বলে মনে করেন?
সিরাজুল ইসলাম: এই দেশে আমি যদি কোন বাড়ি ভাড়া নিতে চাই তাহলে সেখানে একটা হাউস অর্ডনুংগ বা বাড়ির নিয়মাবলী রয়েছে। সেটাতে স্বাক্ষর করেই আমাকে সেই বাড়িতে উঠতে হবে এবং সেখানে থাকতে হবে। যদি আমি এই নিয়মাবলী না মানতে চাই তাহলে আমি সেই বাড়ি থেকে চলে যেতে পারি। আমার নীতিও এই রকম। তাই আমি মনে করি, এই দেশে থাকতে হলে আমাকে এখানকার নিয়ম কানুন মেনে চলতে হবে।
আমার ছেলে মেয়েদের আমি কোন বিষয় চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করিনি। সেটা ভাষা কিংবা ধর্ম হোক। এই দেশে তারা যেভাবে বড় হয়েছে সেটা আমাকে গ্রহণ করতে হয়েছে। এই ক্ষেত্রে আমি মনে করি ছাড় দেওয়ার মানসিকতাটা প্রয়োজন।
সীমান্ত: কখনো বৈষম্যের শিকার হয়েছেন বলে কি মনে হয়েছে?
সিরাজূল ইসলাম: না, আমি এত বছর থাকলেও কোন ধরণের বৈষম্য বা ঘৃণার শিকার হইনি। তবে ভিন্ন রংয়ের হওয়ার কারণে নানা ধরণের মজার অভিজ্ঞতাও আমার হয়েছে। একবার যেমন রাস্তায় এক বাচ্চা আমাকে দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলো। কাছে গেলে আমাকে জিজ্ঞেস করলো তুমি কি কোথাও ছুটি কাটাতে গিয়েছিলে? কেন, জিজ্ঞেস করতে সে বললো, তোমার গায়ের রং তো কালো হয়ে গেছে!
তার মানে এই নয় যে কেউ আমার গায়ের রং নিয়ে কথা বললে সেটা সবসময় অপমান করার জন্য বলা। আমি দেখতে এই দেশের মানুষের চেয়ে আলাদা আমার গায়ের রং কালো এটা আমাকে মেনে নিয়েই এদেশে বাস করতে হবে।