সীমান্ত: জার্মানিতে অনেক প্রবাসী বাংলাদেশীদের ছেলেমেয়ে বড় হচ্ছে। তবে এক্ষেত্রে সাংস্কৃতিক ও জীবনাচারের পার্থক্য অনেক সময় সমস্যার তৈরি করে। এই দুই ভিন্ন সমাজের প্রজন্মের মধ্যে সেতুবন্ধনটা কীভাবে সম্ভব হয়?
নুরুন্নাহার সাত্তার: এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। আর এক্ষেত্রে ছেলে-মেয়েদের সাথে মা-বাবার সহজ, সুন্দর আর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করে নেওয়াটা অত্যন্ত জরুরি। আমরা বিদেশি’ কথাটি সন্তানকে বারবার মনে না করিয়ে দিয়ে জার্মানদের সাথে স্বাভাবিকভাবে মিশতে দিন। আপনার সন্তান যেন ভালো একটি স্কুলে যেতে পারে সেদিকে বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখুন। তাহলে অনেককিছু নিজে থেকেই হয়ে যাবে। বাঙালি বাচ্চাদের ঘরে এক পরিবেশ আবার স্কুল বা বাইরে একেবারে ভিন্ন পরিবেশ’ বিষয়টি কিন্তু বাচ্চাদের জন্যও মেনে চলা খুব সহজ নয়। যতটা সম্ভব নিজেদের সংস্কৃতি সম্পর্কে সন্তানকে জানান। অনেক শিশুদের বাংলা নাচ গান করতে দেখে ভীষণ ভালো লাগে। তবে এসবের পাশাপাশি যদি বাংলা ভাষার চর্চাও কিছুটা করে তাহলে নিজের শেকড় সম্পর্কে জানতে ও বুঝতে ওদের আরো বেশি সুবিধা হবে। সন্তানকে সবকিছু সম্পর্কে সময়মতো সচেতন করে দেয়া জরুরি৷ সন্তানের সাথে মা-বাবা বিশেষ করে মা যদি বন্ধুর মতো সম্পর্ক তৈরি করে তাহলে সবকিছুই অনেক সহজ মনে হবে বলে আমি অন্তত মনে করি।
সীমান্ত: জার্মানিতে অনেক ধরণের অভিজ্ঞতা আপনার হয়েছে। এইক্ষেত্রে বিশেষ কোন ঘটনা কি আপনি মনে করতে পারেন?
নুরুন্নাহার সাত্তার: অনেক কথাই তো মনে পড়ে। তবে যে ঘটনাগুলো মনে দাগ কেটে আছে তার মধ্যে একটি হচ্ছে, তখন সবেমাত্র এদেশে এসেছি। আমরা একটি নতুন বাসা খুঁজছিলাম। ছুটির দিনে বাড়ির মালিকরা সাধারণত একসাথে অনেক মানুষকেই বাসা দেখিয়ে থাকেন। আমরা আগে থেকে ফোন করে একটা বাসা দেখতে গিয়ে যখন পৌঁছেছি তখন বাসাটি ভাড়া হয়ে গেছে। বাড়িওয়ালি অত্যন্ত বিনয়ের সাথে জানালেন সেকথা, আর এও বললেন যে আমাদের ঠিক আগে যারা এসেছিলেন, তারাই পেয়েছেন বাড়িটি। কথা দিয়ে ফেলেছেন তাদের, নইলে নাকি আমরাই নতু ভাড়াটিয়া হতাম। একটু দেরি করে ফেলায় তা আর হলো না। তখন তাঁর মুখের ভাষা না বুঝলেও তাঁর আচরণ, তাঁর আন্তরিকতা আমাকে ভীষণ মুগ্ধ করেছিলো। ফিরে আসার ঠিক আগ মুহূর্তে তিনি আমার স্বামীর হাতে ২০ মার্কের একটি নোট গুঁজে দিয়ে বলেছিলেন, এই টাকা দিয়ে আপনার স্ত্রীকে এক গুচ্ছ ফুল কিনে দেবেন, আপনাদের বাসা দিতে না পারার জন্য আমি অত্যন্ত দুঃখিত।
সীমান্ত: বর্ণবাদের মত কোন ঘটনার মুখোমুখি কি আপনাকে কখনো হতে হয়েছে? যদি হয়ে থাকেন, সেটা কী ধরণের ছিলো?
নুরুন্নাহার সাত্তার: সত্যি বলতে কি আমি, আমার স্বামী বা আমাদের মেয়ে বর্ণবাদের মতো কোনো ঘটনার মুখোমুখি হইনি। তবে অন্যদের মুখে মাঝে মধ্যে কিছুটা শুনেছি। তাছাড়া সময় বদলেছে , গত এক বছরে জার্মানিতে প্রায় ১২ লাখ বিদেশি এসেছে, কাজেই এখন কিছুটা অন্যরকম হবে, সেটাই স্বাভাবিক। মুসলমানদের সম্পর্কে সারা বিশ্বে যেভাবে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। মুসলমান মানেই যে জঙ্গী আর সন্ত্রাসী নয়, অনেকের এ ভুল ধারণা আমাদের আচরণের মধ্য দিয়ে কিছুটা হলেও হয়তো ভেঙে দিতে পারি।