Categories
প্রবন্ধ প্রবাস

বর্ণবাদী সহিংসতা – নিরাপত্তা বাহিনী বর্ণপ্রথার জালে বন্দী?

শ্যার্শ পালাজি

faust©SP

শত বছরের বর্ণবাদ উদ্ভুত শংকা কীভাবে শাদা মানুষের সমাজে গেঁড়ে বসে আছে সেটা আমরা দুর্ভাগ্যবশত প্রায়ই লক্ষ্য করি যখন তাদের নিরাপত্তা বাহিনীগুলো কোন অভিযান চালায়। তখন কালো মানুষদের নিয়ে তাদের ভয়টা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এই আতঙ্ক, এই সহানুভূতিহীন মানসিকতা অতলান্তিকের দুই পাড়ের দাস ব্যবসা এবং বিশ্বব্যাপী উপনিবেশবাদে অনুঘটক হয়ে কাজ করেছে, যার লক্ষ্য ছিলো উপনিবেশবাদীদের অত্যাচারকে বৈধতা দেওয়া। সময়ের বিবর্তনে সেটা এখন আরও জোরালো হয়েছে। অনেকেই সেটা বুঝতে পারেন আবার অনেকেই সেটা জেনেশুনেও না বোঝার ভান করেন। এতে করে স্পষ্ট যে, বর্ণবাদ সেই উপনিবেশবাদেরই ফলাফল এবং তা মানব জাতিকে এখনও ভোগাচ্ছে। সম্প্রতি গত ৮ আগস্ট ১৬ বছরের মোহামেদ লামিনে ড্রামের সঙ্গে যেটা ঘটলো। গণমাধ্যম জানায়, এই সেনেগালিজ কিশোরকে নাকি কব্জা করতে ১২ জন পুলিশ লেগেছিলো! যার ফল হয় পুলিশের গুলিতে তার মৃত্যু। এই পুলিশ সদস্যদের প্রশিক্ষণ মনে হয় একেবারে জঘন্য ছিলো অথবা তারা প্রমাণ করতে চেয়েছিলো অভিযানের সময় দরকার হলে অশ্বেতাঙ্গদের সঙ্গে কী করতে হয়। দুঃখজনক হলেও সত্য যে এটাই প্রথম ঘটনা নয়।

মরণঘাতী লক্ষণ

না, শুধু আমেরিকাতেই কালো এবং অশ্বেতাঙ্গ মানুষ পুলিশী অত্যাচারের শিকার হয় না। প্রতিবারই এই ধরণের ঘটনার পর শ্বেতাঙ্গ অধ্যুষিত বিচার বিভাগ এবং তথাকথিত বিভাগীয় তদন্ত কমিটির কারণে খুব কমই দোষী ব্যক্তিরা সাজার মুখোমুখি হয়। জার্মানিতে এরকম উদাহরণ হিসেবে ওউরি জাল্লোহর ঘটনার কথা বলা যায়। প্রতিটা ঘটনাতেই দোষী ব্যক্তিদের আড়ালে নেওয়ার চেষ্টা করা হয় আর এসব ঘটনা নির্মমতার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। দোষীদেরকে আড়াল করার এই ধরণের কারসাজি সামাজিকভাবে আরও বিপর্যয় ডেকে নিয়ে আসবে। আমেরিকাতে বিগত ২০২০ সালের ২৫ মে জর্জ ফ্লয়েডের ঘটনার যে বিচার করা হয়েছিলো তা ছিল একটি ব্যতিক্রম। এই ঘটনা অবশ্য আমাদেরকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে যে বর্ণবাদমূলক সহিংসতা মোকাবেলায় তারা আমাদের চেয়ে এক কদম এগিয়ে।

আস্থার ঘাটতি

Serge-Palasie©SP
শ্যার্ষ পালাজি

যতদিন পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে সত্যিকার কোন পদক্ষেপ না নেওয়া হচ্ছে, ততদিন পর্যন্ত এখানকার বর্ণবাদের শিকার মানুষগুলোর প্রশ্ন করার অধিকার আছে, এই সমাজ আসলে কাদেরকে সুরক্ষা দেয় আর কাদেরকে দেয় না? যে রাষ্ট্র নিজেকে গর্ব করে ”পশ্চিমা মূল্যবোধ” এর অনুসারী বলে আর অন্য দেশকে মানবাধিকার নিয়ে উপদেশ দেয় তাদের উচিত নিজেদের কাজটা আসলে আগে করা, যদি তারা দেশ এবং বিদেশে নিজেদেরকে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলে ধরতে চায়। শুধু কথা বললেই হবে না। আমাদের নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর আস্থা দিন দিন কমছে। যারা দোষী তাদেরকে আড়াল করাটা নিরাপত্তা বাহিনীর জন্য নৈতিকভাবে অগ্রহণযোগ্য এবং এর ফলে যারা নিজের দায়িত্বটা সঠিকভাবে পালন করেন তাদের জন্য এটা বিরক্তিকর হয়ে উঠছে। তাই যতদিন সুযোগ রয়েছে ততদিন সুশীল সমাজকে এই বিষয়ে উচ্চকিত থাকতে হবে। কেউ বর্ণবাদের শিকার হোক আর নাই হোক, এই ক্ষেত্রে প্রত্যেকেই ভূমিকা রাখতে পারে।

আগে থেকেই শিক্ষার ব্যবস্থা

এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য প্রয়োজন সচেতনতার। শিক্ষা ব্যবস্থায় গতানুগতিক ধারার বাইরে আনতে হবে সত্যিকার বৈচিত্রতার দক্ষতা। পুলিশ থেকে শুরু করে আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী, তাদের কেউই এর থেকে বাদ পড়তে পারবে না। কিন্তু আমাদেরকে আরও আগে থেকেই শুরু করতে হবে: দুয়েকটি ক্ষেত্রে কিছু অগ্রগতি ছাড়া আমাদের ছেলেমেয়েরা এখনও এমন সব পরিস্থিতির মুখোমুখি হয় যা মূলত বর্ণপ্রথার পক্ষেই কাজ করে। এর শুরু হয় মূলত কিন্ডারগার্টেন এবং স্কুলের সেসব বিতর্কিত বইপত্র থেকে যা বর্ণবাদের জন্ম দেয়। ভবিষ্যতের নাগরিকরা যখন এই ধরণের বিদ্যালয় থেকে উঠে আসে, তখন তাদের জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়ায় নিজের বর্ণবাদী চিন্তাভাবনাকে পাঠ করার এবং নিজেকে সে অনুযায়ী বদলে ফেলার। সমাজে যেহেতু এই বিষয়টি ব্যাপক ছড়িয়ে আছে, তার সঙ্গে আরও যে বিষয়টি এটিকে আরও করুণ করে তুলেছে তা হলো এই ধরণের মানুষেরা একে অপরকে সকল স্তরে লুকিয়ে রাখে এমনকি রক্ষা করার চেষ্টা করে। বর্ণপ্রথার জালে আটকে থাকা এই সহানুভূতিকে যতটা সম্ভব আগে থেকেই চিহ্নিত করতে হবে। যেসব নীতি নির্ধারকরা এই পদক্ষেপ নিতে ‍দ্বিধা করছে তারা মূলত সামাজিক স্থিতিশীলতা এবং জার্মানির ভবিষ্যত নিয়ে খেলছে।