মুসা আশারকি বিগত চার দশক ধরে জার্মানিতে বাস করছেন। জন্ম তার মরক্কোতে, বর্তমানে তিনি একজন সফল ব্যবসায়ী। সবসময় চেষ্টা করেন দেশের মানুষের প্রয়োজনে পাশে দাঁড়াতে। এজন্য একসময় স্থানীয় রাজনীতিতে নাম লেখান। বিগত ১৫ বছর ধরে মুসা আশারকি বন শহরের ইন্টেগ্রাতসিওনরাট এর নির্বাচিত সদস্য। তার রাজনৈতিক কাজকর্ম এবং বনের বর্তমান পরিস্থিতি তিনি তুলে ধরেছেন সীমান্ত ম্যাগাজিনের সঙ্গে সাক্ষাতকারে।
সীমান্ত: জনাব আশারকি, আপনি অনেক বছর ধরে স্থানীয় রাজনীতিতে জড়িত। আপনি কীভাবে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়লেন এবং এক্ষেত্রে কোন বিষয়টি আপনাকে সবচে বেশী অনুপ্রেরণা দিয়েছে?
মুসা আশারকি: আমি যখন ছোট ছিলাম তখন আমি আমার পরিবারের সঙ্গে জার্মানিতে চলে আসি। সেসময় অভিবাসীদের সংখ্যা বেশি ছিল না। কিন্তু এখন তা অনেক বেড়েছে, বন শহরের বর্তমান জনসংখ্যার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ অভিবাসী। তা সত্ত্বেও আমরা নানাভাবে বর্ণবাদ এবং বৈষম্যের শিকার হই। ছোটবেলায় আমি নিজেই এটা দেখেছি। আমি দেখেছি কীভাবে অভিবাসীরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবহেলার শিকার হয়েছে। তার একটা কারণ ছিল সরকারি অফিসগুলোতে এবং রাজনীতিতে অভিবাসীদের তেমন কোন জায়গা ছিল না। জার্মানির স্থানীয় রাজনীতিতে ঢোকার জন্য এই বিষয়টি আমাকে সবচে বেশি তাড়িত করেছে।
সীমান্ত: এই অবস্থার কোন পরিবর্তন কি বিগত বছরগুলোতে হয়েছে?
মুসা আশারকি: সাধারণভাবে বলতে গেলে আসলে দুয়েকটি ব্যতিক্রম ছাড়া অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে। এসব নিয়ে কথাবার্তা বেশি হয়, কিন্তু কাজের কাজ কম হয়। অনেক জায়গা আছে যেখানে এই ব্যাপারগুলো নিয়ে অনেক কাজ বাকি আছে। ক্ষেত্রবিশেষে আমি মনে করি বৈষম্য আদৌ কমেনি। যদি আমরা বিশ বছর আগের সঙ্গে তুলনা করি তাহলে দেখবো অভিবাসীর সংখ্যা যেমন অনেক বেড়েছে, তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বৈষম্য আর বর্ণবাদের ঘটনাও বেড়েছে। আমার খারাপ লাগে যখন দেখি বেশিরভাগ সময় শুধু অভিবাসীদের নেতিবাচক বিষয়গুলো সামনে আনা হয়। অথচ তাদের অনেক ইতিবাচক বিষয়ও আছে। ছোটবেলায় আমি জার্মানির জাতীয় ফুটবল দলে তেমন কোন অভিবাসী খেলোয়াড় দেখিনি, আর এখন দলের অর্ধেকই অভিবাসী।
সীমান্ত: ইন্টেগ্রেশন আর বহুসংস্কৃতি নিয়ে জার্মানিতে খুব আলোচনা চলে। আপনি ইন্টেগ্রেশন বলতে কী বোঝেন?
মুসা আশারকি: এটা একটা জটিল বিষয় কারণ সবাই এটা তার মত করে বোঝে। আমার মতে ইন্টেগ্রেশন হচ্ছে যখন কেউ এই দেশের ভাষাটা ভালোভাবে জানে এবং স্থানীয় আইন কানুন মেনে চলে। আমি মনে করি এই সমাজের জন্য কিছু করাটাও গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু ইন্টেগ্রেশন কেবল একপক্ষ থেকে হতে পারে না আর এটা চাপিয়ে দেওয়ার বিষয়ও না। আমার আশেপাশের মানুষ যেরকম তাদেরকে সেভাবেই আমাদের মেনে নিতে হবে, তা তাদের ধর্ম কিংবা আদর্শ যাই হোক না কেন। এগারই সেপ্টেম্বরের হামলার পর সংবাদ মাধ্যমগুলো ইসলাম ধর্মকে খুব নেতিবাচকভাবে তুলে ধরেছে। আর অনেক মানুষ আছে যাদের খুব বেশি ধারণা নেই মুসলমানদের সম্পর্কে। এই ধরণের নেতিবাচক প্রচারণার কারণে তাদের অনেকেই মুসলমানদের নিয়ে ভূল ধারণা নিয়ে বসে আছে।
সীমান্ত: এই প্রসঙ্গেই পরের প্রশ্ন, অভিবাসীরা কীভাবে এই ধরণের ভুল ধারণার মোকাবিলা করতে পারে? অথবা যখন তারা রাস্তা ঘাটে অপদস্থের শিকার হয়?
মুসা আশারকি: আমার অভিজ্ঞতা বলে যখন কোন মুসলমান নারী পুরুষ এই রকম ঘটনার শিকার হয়ে পুলিশের কাছে যায় তখন সেটা কেবল একটা অপরাধমূলক ঘটনা হিসেবে নথিবদ্ধ করা হয়। কিন্তু ঘটনার পেছনে কী উদ্দেশ্য থাকতে পারে সেটা এড়িয়ে যাওয়া হয়। এই ধরণের ঘটনাগুলো সঠিকভাবে পুলিশের খাতায় উঠাতে হবে। এর ফলে সরকারি হিসেবে এসব ঘটনার উদ্দেশ্যগুলো অজানা থেকে যায়।
এই সমাজে প্রচুর ভুল ধারণা রয়েছে যেগুলো মূলত আশংকা থেকে উদ্গত। অনেকেই ধর্মকে সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলেন। এজন্য উভয় পক্ষ থেকে আরও বেশি সম্পৃক্ততা এবং পারস্পরিক বোঝাপড়া বাড়ালে এই ধরণের ভুল ধারণার অবসান ঘটানো সম্ভব। যখন কেউ ধর্মীয় কারণে মদ খাওয়া থেকে বিরত থাকে, কিংবা কোন নারী মাথায় ঘোমটা দেয় তখন সেটা মেনে নেওয়া উচিত।
সীমান্ত: সহনশীলতা আর মত প্রকাশের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে বন শহরের অবস্থা কেমন?
মুসা আশারকি: জাতিসংঘের শহর হিসেবে বন খুবই আন্তর্জাতিক এবং বৈচিত্রময়। কিন্তু এটা শুধু ইমেজ বাড়ানোর জন্য ব্যবহার করলে হবে না, এজন্য দায়িত্বও রয়েছে। উদাহরণ হিসেবে আমি বনের অভিবাসন দপ্তরের কথা বলতে পারি। যে কোন প্রয়োজনে প্রবাসীদের প্রথম যাওয়ার জায়গা হচ্ছে এটি। তাদেরকে সাহায্য করার জন্য অভিবাসন দপ্তরের উচিত আরও বেশি জনবল নিয়োগ করা। আমি প্রায়ই অভিযোগ পাই যে এই অফিসের অ্যাপয়েন্টমেন্ট পেতে মানুষকে অনেকদিন অপেক্ষা করতে হয়। মাসের পর মাস অপেক্ষা করার ফলে অনেকে চাকরি কিংবা বাসা খুঁজতে গিয়ে হয়রানির শিকার হন। এছাড়া বনের স্কুলগুলোতে শিক্ষক সংকট এখন চরমে উঠেছে। অথচ অনেক নারী যোগ্যতা সত্বেও শুধু হিজাবের কারণে এই চাকরিতে সুযোগ পান না। এই অবস্থা বদলাতে হবে।