Categories
প্রবাস সাক্ষাতকার

“একাত্মকরণ মানে একসঙ্গে ভবিষ্যত গঠনের চেষ্টা করা“

মার্টিনা গেলার বহু বছর ধরে ব্যাংক এবং বেসরকারী সংস্থাগুলোতে চাকরি করেছেন।   তবে অভিবাসী এবং জার্মানিতে বসবাসরত প্রবাসীদের প্রতি বরাবরই তিনি একটি হৃদয়ের টান অনুভব করতেন।  তাই তার অন্য সহকর্মীদের বিপরীতে তিনি অনেকটা সময় ব্যয় করতেন স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে।   তার দীর্ঘ সময় ধরে এই স্বেচ্ছাসেবার স্বীকৃতি স্বরুপ মার্টিনা গেলার ২০১৯ সালে ম্যোনশেনগ্লাডবাখ শহরের ইন্টেগ্রেশন বিষয় পুরুষ্কার লাভ করেন।   সীমান্ত ম্যাগাজিনের সঙ্গে সাক্ষাতকারে তিনি তুলে ধরেছেন তার স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজের আরও অনেক কিছু। 

সীমান্ত: আপনি কীভাবে স্বেচ্ছাসেবী কাজকর্মের সাথে সম্পৃক্ত হলেন?

মার্টিনা গেলার: আমি একজন ক্যাথলিক পরিবারের সদস্য। আর আমার বাবা-মা জোর দিতেন যে আমি এবং আমার পাঁচ ভাই-বোন ছোটবেলা থেকেই গির্জার নানা সেবামূলক কাজে জড়িত থাকি।  আমি কাজ শুরু করেছিলাম ম্যোনশেনগ্লাডবাখ এর প্রধান যাজক এরলেমান (যিনি পরবর্তীতে provost অবস্থায় মারা যান) এবং সিস্টার হেরিবুর্গ এর সাথে।

আজ এই পর্যায়ে আমি আমার কাজের প্রতি যেন একটা ডাক অনুভব করি এবং আমি আমার কাজকে পেশা হিসেবে নিতে চাই।

সীমান্ত: এই যে আপনার নেটওয়ার্ক “Meeting Point of of Freedom and Justice”, এর দ্বারা আপনি আসলে কী অর্জন করতে চাচ্ছেন? কিংবা আপনার লক্ষ্য কী?

©DieGrenze

মার্টিনা গেলার: এই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন ইতিহাস, সংস্কৃতি, সামাজিক এবং খেলাধুলা বিষয়ক প্রকল্পের পরিকল্পনা এবং সেগুলো বাস্তবায়ন করে থাকি যার মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন সংযোগস্থল গড়ে তুলতে চাই। আমরা স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজের মাধ্যমে সমাজে একটি শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখি।

আবার একই সঙ্গে দেশের রীতি নীতি এবং ঐতিহ্য ধরে রাখা এবং পরিবেশ-প্রকৃতিও আমার কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ। সাক্ষাত স্থানগুলোর মাধ্যমে প্রত্যেকেই একে অন্যের সাথে মেশার সুযোগ পাই। আমার কাছে এই সাক্ষাত স্থানগুলো হচ্ছে বৈষম্যহীন যোগাযোগ ও সংলাপের জায়গা যার বিষয় হবে তথ্য, শিখ্ষা এবং উন্নয়ন ও তার পাশাপাশি একে ওপরকে সহযোগিতা।   এই সাক্ষাতস্থলগুলো সম্প্রদায় গঠন, অবসর কার্যক্রম, বিনোদন, শিল্প সাধনা এবং প্রকৃতি নিয়ে সচেতনতায় কাজ করে। এখানে এটা বিষয় নয় যে কাজগুলো খেলার দুপুর, অবসর, সকালের নাশতা, ছবি আঁকা, হস্ত শিল্প বা এমন আরো সময়ের মধ্যে আদায় হলো কী না!

একে অপরকে বোঝা, সহনশীলতা, উদারতা, বিভিন্ন জাতীয়তা এবং দেশের মানুষের কাছাকাছি যাওয়ার মাধ্যমে আমরা আমাদের আরও সমৃদ্ধ করে থাকি এবং এটা আমাদের উন্নতিতেও সহায়ক।

সীমান্ত: বিগত কয়েক বছর থেকেই জার্মান সমাজে একাত্মকরণের কথা বলা হয়েছে? আপনার মতে এই একাত্মতা বিষয়টা আসলে কী?

মার্টিনা গেলার: আমার কাছে একাত্মকরণ হচ্ছে নিজের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়ার এবং এবং সমাজে নিজের একটা অবস্থান খুঁজে পাওয়ার স্বাধীনতা।

ম্যোনশেনগ্লাডবাখে দেড়শরও বেশি দেশ, সংস্কৃতি, ধর্ম এবং ভাষাভাষী মানুষের বসবাস। আমাদের জন্মভূমি রঙিন এবং বৈচিত্রময়। আমার কাছে একাত্মকরণ মানে কুসংস্কার দূর করে একসঙ্গে ভবিষ্যত গঠনের জন্য একে অন্যের সাথে হাত মেলানো।

কেবল আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে নয়, বরং সমাজে পিছিয়ে পড়া মানুষও এই একাত্মতার মাধ্যমে সমান সুযোগ পাবে, বিশেষ করে সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক অঙ্গনে। বিপরীত চিন্তাধারার মানুষের প্রতিও থাকবে শ্রদ্ধা এবং সহনশীলতা।

©MG

এখানকার মানুষদের একসাথে সহাবস্থানের মূল ভিত্তি হিসেবে জার্মানির সংবিধানকে গ্রহণ করতে হবে।  জার্মানদের মত বিদেশিরকেও এখানে আইন মেনে চলতে হবে এবং প্রচলিত মূল্যবোধকে সম্মান করতে হবে। অপরাধমূলক কার্যক্রমে কোনো সহানুভূতি দেখানো হবে না।

একাত্মতা এমন একটা প্রক্রিয়া যেটা পারস্পরিক সমঝোতা এবং সম্মানবোধ দিয়ে চালিত হয়।  এখানে সামাজিক বন্ধন এবং শান্তির জন্য সুস্পষ্ট নিয়মনীতি নির্ধারিত থাকবে।

সীমান্ত: ইসলাম এবং বিদেশিদের প্রতি ঘৃণাবাদকে অভিবাসীরা কীভাবে মোকাবিলা করতে পারে?

মার্টিনা গেলার: শিক্ষামূলক কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে কুসংস্কার, বৈষম্য এবং বর্ণবাদকে প্রতিরোধ করা উচিত। এসবের বিরুদ্ধে যথাযথ শাস্তিও প্রয়োগ করা উচিত এবং এই শাস্তি সবার জন্যই প্রযোজ্য।

একারণেই আমি শিক্ষামূলক কার্যক্রম এবং সাক্ষাত স্থান তৈরিকে গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোর একটি হিসেবে  দেখি। সংলাপ ও আলাপ আলোচনার জন্য এমন আরো অনেক সাক্ষাত স্থান থাকা উচিত।

“সত্যিকারের সম্মান আমরা তখনই অর্জন করি যখন আমরা একে অন্যের সাথে যোগাযোগ করি এবং উভয় পক্ষের গুরুত্ব বুঝি এবং তা গ্রহণ করি। এভাবেই আমরা একে অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ গড়ে তুলতে পারি।”

—দালাই লামা