Categories
গল্প লেখালেখি

নাম

হোসাইন আব্দুল হাই

  • আপনি কি জনাব মিয়া?
  • জি, আমি মিয়া।
  • আপনার নামের প্রথম অংশ কী?
  • আমার নামের প্রথম অংশ মোহাম্মদ নাসিব।
  • আপনার নামের প্রথম অংশ কি দুটো?
  • জি হ্যাঁ, আমার নামের প্রথম অংশে দু’টো শব্দ রয়েছে।
  • আহা! আজব ব্যাপার।
  • আপনার কাছে এটা আজব মনে হচ্ছে কেন? এটা আদৌ আজব কোন ব্যাপার নয়। বরং আমাদের কাছে এটা খুবই স্বাভাবিক।
  • আপনি ‘আমাদের’ বলতে কী বুঝাতে চান? আপনি তো এখন অন্য কোথাও নন। বরং আপনি এখন জার্মানিতে। আর জার্মানিতে এটা আদৌ স্বাভাবিক নয়। জার্মানিতে আমাদের হাজার বছরের ঐতিহ্য রয়েছে। এখানে প্রায় সবারই নাম শুধুমাত্র দু’টি – একটি প্রথম নাম আর অন্যটি শেষ নাম।
  • ঠিক একইরকম আমাদেরও হাজার বছরের নিজস্ব ঐতিহ্য রয়েছে। আর সেগুলোরই একটি হলো আমাদের নামের শুরুতে ‘মোহাম্মদ’। আমরা কেউ সেটা পুরোটা লিখি, আবার কেউ সংক্ষেপে ‘মোঃ’ লিখি।
  • কিন্তু আমরা আপনার বিয়ের সনদপত্রে এভাবে লিখতে পারবো না।
  • কেন নয়? আমার শিক্ষা জীবনের সকল সনদপত্রে এবং সকল কাগজপত্রে নামের শুরুতে ‘মোহাম্মদ’ আছে। আমি সেসব কাগজপত্র কিভাবে পাল্টাতে পারি? আপনি যদি আজ এই সনদে ঠিক একইভাবে না লেখেন, তাহলে তো আমার সব কাগজপত্রে নামের মিল থাকবে না।
  • জনাব মিয়া, আমার দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা রয়েছে এবং আমি খুব ভালমতই গবেষণা করে দেখেছি যে, আপনার নিজের মাতৃভূমিতে কিভাবে এই নামের অংশ সংযুক্ত হয়েছে। তাই আমার যথেষ্ট জ্ঞান আছে, যে নাম কিভাবে লেখা উচিত। আপনার কাছ থেকে লম্বা কাহিনী শোনার মতো যথেষ্ট সময় আমার নেই। আপনার বিয়ের সনদপত্র নেওয়ার জন্য ১৭ জুলাই, বুধবার আসেন। আমি এর মধ্যে এ বিষয়ে সিদ্ধান্তের জন্য আমার বিভাগীয় প্রধানের সাথে আলাপ করার চেষ্টা করবো।

২৩শে মার্চ মিয়া গিয়েছিল বিয়ে নিবন্ধন দপ্তরে তার বিয়ের সনদপত্রের জন্য আবেদন করতে। এরপর তিন মাস তাকে অপেক্ষার প্রহর গুণতে হয়েছে শুধুমাত্র এজন্য যে, সনদপত্রে তার নিজের নাম কিভাবে লেখা হবে। 

  • শুভ দিন, জনাব মিয়া। আপনার নামের বিষয়ে আমার বিভাগীয় প্রধানের সাথে দীর্ঘসময় ধরে আলোচনা করেছি। কিন্তু আমরা দুঃখিত যে, আপনার নাম আমরা মোহাম্মদ কিংবা মোঃ কোনটা দিয়েই লিখতে পারছিনা। বরং আমরা শুধুমাত্র আপনার দুটি নাম নাসিব মিয়া সনদপত্রে লিখতে চাই।  
  • বেগম ম্যুলার, এটা হতে পারে না। মোহাম্মদ কিংবা মোঃ বাদ দিয়ে আমার নাম লিখতে দিতে পারি না। আমি সবজায়গায় আমার পুরো নামেই পরিচিত। আর সেটাই আমার পরিচিতি, আমার বিশ্বাস এবং আমার অস্তিত্ব। আপনি আমার পরিচিতি পাল্টাতে পারেন না।