গেরগানা ঘানবারিয়ান বালেভা
আমি কখনো ভাবিনি যে এমন দিন আবার আসতে পারে।
আমার দাদা-দাদী যখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী জীবনের কথা বলতেন—ক্ষুধা, রেশন কার্ড, মুদ্রাস্ফীতি আর টাকার অভাব-শিশু হিসেবে আমি শুধু ভাবতাম: যাক ভালো যে সেই সব দিনগুলো অতীত হয়ে গেছে। আমি নিশ্চিত ছিলাম, আমাকে এমন কিছু কখনো দেখতে হবে না।
কিন্তু তারপর আমি বিশে পা দিলাম। বিদ্যুৎ বন্ধ হয়ে গেল, খাদ্য সংকট দেখা দিল, টাকার মান পড়তে থাকল- আর আমাদের হাতে আবারও রেশন কার্ড এল।
শিশুবেলায় আমার কাছে লাল আর নীল মানে ছিল শুধু বুলগেরিয়ার ফুটবলের চির প্রতিদ্বন্দ্বী- সিএসকেএ বনাম লেভস্কি। ম্যাচের দিন শহর কেন্দ্রের যেখানে স্টেডিয়াম ছিল সেদিকে যাওয়া আমার নিষেধ ছিল কারণ ম্যাচের সময়, আগে আর পরে সমর্থকদের দাঙ্গা লেগে যেত। কেউ ভুল করে অপর দলের সমর্থকে ভরা বাসে চড়লে তার মানে মানে ছিল আত্মহত্যার মত।
যুগের পরিবর্তনের পর লাল-নীলের অর্থ বদলে গেল। সমাজ বিভক্ত হয়ে পড়ল—প্রতিবেশী, বন্ধু, এমনকি পরিবারের সদস্যরাও পরস্পর বিরোধী হয়ে উঠল। একদিকে “লাল”—কমিউনিস্টরা, অন্যদিকে নতুন “ডিম ফুটে বের হওয়া” গণতন্ত্রপন্থীরা—”নীল” দল।
মাসের পর মাস রাস্তায় রাস্তায় চললো বিক্ষোভ। মিডিয়ায়ও যুদ্ধ চলতে থাকল। বাড়িতে ভাইবোন, নাতি-দাদার মধ্যে তর্ক-কেউ রেহাই পেল না।
আমার পৃথিবী সম্পূর্ণ বদলে গেল।
১৯৮০-এর দশকের মাঝামাঝি একই রকম কিছু ঘটল। শতাব্দীর পর শতাব্দী পাশাপাশি বসবাস করা মানুষগুলো হঠাত্ একে অপরের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেওয়া হলো—তুর্কি সংখ্যালঘু বনাম বুলগেরীয় সংখ্যাগুরু।
বুলগেরিয়ার তুর্কিদের জন্য “বিকল্প” আসলে কোনো বিকল্পই ছিল না—হয় থাকতে হবে আর সব মেনে নিতে হবে (তুর্কি নাম বদলে বুলগেরিয়ান নাম নিতে হবে, হিজাব ছাড়তে হবে, নিজেদের পরিচয় বিসর্জন দিতে হবে), নয়তো দেশ ছাড়তে হবে।
সপ্তাহের পর সপ্তাহ ধরে তুরস্কের সীমান্তে আটকে থাকল পরিবারগুলো। তারা চলে গেল নিজ ভূমি ছেড়ে- সঙ্গে ছিল শুধু সবচেয়ে প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো।
আর আজ আমরা আবারও এক পরিবর্তনের মুখে দাঁড়িয়ে।
একটি নতুন বিপদ, একটি নতুন সংকট যা আমাদের জীবনকে আবারও বদলে দিতে পারে।
কে জিতবে এবার—লাল নাকি নীল?