মোমো সিসোকো বিগত ২০০৬ সালে পড়াশোনার উদ্দেশ্যে জার্মানিতে আসেন। তার আগে জন্মভূমি মালিতে কাটিয়েছেন জীবনের প্রথম ২৫টি বছর। কিন্তু ছোটবেলা থেকেই তার ঝোঁক ছিল ফুটবলের প্রতি। স্বপ্ন দেখতেন একদিন ফুটবল কোচ হবেন। সেজন্য জার্মানিতে পড়তে এসে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিষয় বেছে নেন ক্রীড়া শিক্ষা। তারপর একসময় পড়াশোনা শেষ করেন এবং কোচ হিসেবে উয়েফা লাইসেন্স অর্জন করেন। জার্মানির একাধিক ফুটবল ক্লাবে প্রশিক্ষণের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তার মধ্যে রয়েছে বুন্দেসলিগার দল এফসি কোলনও।
কিন্তু ফুটবলের পাশাপশি তিনি আরও একটি কাজ সবসময় করতেন, তা হলো মানুষকে সাহায্য করা। মালি থেকে জার্মানিতে আসার পর বেশ কয়েকটি অভিবাসী সংগঠনের সঙ্গে তিনি যোগাযোগ রাখতেন এমনকি ছাত্রাবস্থায় তাদের জন্য কাজও করেছেন। সেখানে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ থেকে আগত মানুষদের ভাষাশিক্ষার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন কিংবা জরুরী তথ্য দিয়ে সাহায্য করেছেন। কখনো তাদের সঙ্গে সরকারী দপ্তরেও গিয়েছেন। কিন্তু এক পর্যায়ে তিনি বুঝতে পারেন এভাবে হবে না। অভিবাসীদের প্রয়োজন মেটাতে হলে দরকার পেশাদার সংগঠন। সেজন্য ২০১৯ সালে গঠন করেন জামানিয়েতা। সীমান্ত ম্যাগাজিনের সঙ্গে সাক্ষাতে তিনি তুলে ধরেন আরও বিস্তারিত তথ্য।
সীমান্ত: আপনার সংগঠন সম্পর্কে আরও কিছু বলুন।
মোমো সিসোকো: বাম্বারা ভাষায় জামানিয়েতা মানে হলো একসঙ্গে এগিয়ে যাওয়া। আমাদের সংগঠনের দুই ধরণের কার্যক্রম রয়েছে। প্রথমে হচ্ছে আমরা শরণার্থী কিংবা দেশত্যাগে বাধ্য এমন মানুষগুলোকে সাহায্য করে থাকি। তাদেরকে আমরা পরামর্শ এবং সঙ্গ দিয়ে থাকি। আমাদের “কালা নাফা” নামে একটি প্রকল্প রয়েছে। যেসব মানুষ তাদের দেশে পড়ালেখা ছেড়ে আসতে বাধ্য হয়েছে তারা যেন এখানে তাদের পড়ালেখা চালিয়ে নিতে পারে সেজন্য আমরা এই প্রকল্পের অধীনে তাদের সহায়তা করে থাকি। আমরা কোলন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাহায্যে এজন্য একটি শিক্ষা কার্যক্রম তৈরি করার চেষ্টা করছি। এছাড়া প্রবাসী তরুণ প্রজন্ম এবং মায়েদের কারিগরী জ্ঞান বৃদ্ধির জন্য আমরা প্রকল্প শুরু করেছি। আমাদের সংগঠন ইতিমধ্যে কোলনের আন্ত:সাংস্কৃতিক কেন্দ্রতে নিবন্ধিত হয়েছে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আমরা পশ্চিম আফ্রিকার একাধিক দেশে কাজ করছি যেখানে শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং দক্ষতা বৃদ্ধির প্রকল্প আমাদের রয়েছে।
সীমান্ত: আপনি রাজনৈতিকভাবেও সক্রিয়। জার্মানির নাগরিকত্ব আরও সহজ করা নিয়ে যে আলোচনা চলছে তা নিয়ে আপনার মতামত কি?
মোমো সিসোকো: জার্মানি ইতিমধ্যে একটি অভিবাসী এবং বহু সংস্কৃতির দেশে পরিণত হয়েছে। জার্মানির নাগরিকত্ব সহজ করাটা আরও অনেক আগেই উচিত ছিল। আমার জানামতে জার্মানি বাদে প্রায় সব উন্নত দেশগুলোতেই দ্বৈত নাগরিকত্ব রয়েছে। আমার মতে যদি কেউ তার দক্ষতা দিয়ে এই দেশে অবদান রাখতে পারে তাহলে তাকে দ্রুত জার্মান নাগরিকত্ব লাভের সুযোগ দেওয়া উচিত। আমাদের এখানে ইতিমধ্যে দক্ষ জনশক্তির অভাব রয়েছে কারণ ভিসা পেতে অনেক সময় লাগে। আমার মতে এই প্রক্রিয়া আরও দ্রুত করা উচিত।
সীমান্ত: অভিবাসী সংগঠনগুলো এই জার্মান সমাজেরই একটি অংশ। কিন্তু তাদেরকে সেভাবে মূল্যায়ন করা হয় না কেন?
মোমো সিসোকো: বিগত ২০২১ সালে আমরা এই বিষয়টি নিয়েই একটি বড় অনুষ্ঠান করেছিলাম। আমাদেরকে সব বিষয়ে অংশ নিতে দেওয়া হয় না। সবসময় সিদ্ধান্ত উপর থেকে আসে। উদাহরণ হিসেবে আমি বলতে পারি আমাদের প্রকল্প অনুমোদনের বিষয়টি। নিয়ম অনুযায়ী এই প্রকল্পের জন্য অভিবাসী সংগঠনগুলোকে আবেদন করতে হয় দাতা সংগঠনগুলোর কাছে। এই দাতা সংগঠনগুলোই সব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে কিন্তু সেখানে অভিবাসী কাউকে রাখা হয় না। এটা বদলানো উচিত। অনেক প্রবাসী আছেন যাদের প্রয়োজনীয় দক্ষতা রয়েছে, তাদেরকেও ওইসব গুরুত্বপূর্ণ কমিটিতে রাখতে হবে যাতে করে তারা সেখানে অভিবাসীদের প্রতিনিধিত্ব করতে পারেন। মাঠ পর্যায়ে অনেকেই এই বিষয়টিকে সমর্থন করেন তবে সিদ্ধান্তটা শেষ পর্যন্ত উপর থেকেই আসতে হবে।