বাংলাদেশের হাজার হাজার শিক্ষার্থী এখন বাস করছে জার্মানিতে। পড়াশোনা আর ক্যারিয়ারের পাশাপাশি তাদের অনেকেই গড়ে তুলছেন নানা উদ্যোগ। কারো যেমন আছে দেশীয় খাবারের রসুইঘর কিংবা দেশী পোশাকের দোকান। অনেকে লেখালেখি কিংবা ছবি আঁকাআঁকি নিয়েও থাকেন। আবার কেউ আছেন গান বাজনা নিয়ে। তেমনি একটি উদ্যোগ নতুন ব্যান্ড দ্য ডর্ম রুম। এক ঝাঁক তরুণ সঙ্গীত শিল্পী এবার জার্মানিতে নিয়ে এসেছেন দেশীয় সঙ্গীতের ঐতিহ্য।
নিজস্ব একটা ব্যান্ড দল করার আইডিয়াটা যার মাথায় শুরুতে আসে তিনি ফাখহোখশুলে স্যুডভেস্টাফালেন এর ছাত্র আকিব রেজা আরাজ । বিগত ২০২০ সালে বার্লিনে থাকতে আরও তিন বন্ধু আশিক, রেলো ও প্রাতিষ্ঠাকে সাথে নিয়ে গড়ে তোলেন দ্য ডর্ম রুম। দুই বছর পর বার্লিন থেকে চলে আসেন এনআরভে রাজ্যের এসেন শহরে। দূরত্বের ফলে কিছুটা ছন্দপতন ঘটে ব্যান্ডের। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যে এখানে খুঁজে পান তাসমিনা বাহাদুর সুরমা, ওমায়ের ইবনে জাফর আর ইশরাতুল ইসলামকে। এই চারজন গত কয়েক মাসে একাধিক শো করেছেন এনআরভের বিভিন্ন শহরে। তাদের পারফরমেন্স ইতিমধ্যে সাড়া ফেলেছে বাংলাদেশী কমিউনিটিতে।

ব্যান্ডের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও ড্রামার আকিব বলেন, কয়েক বছর আগে বার্লিনের একটা কালচারাল শো’তে কয়েকজনের সঙ্গে দেখা হয়, চিন্তা করছিলাম এখানে কোন প্রপার ব্যান্ড নাই, মানে একজন ভোকাল থাকবে, গিটারিস্ট থাকবে, ড্রামার থাকবে, পুরো একটা টিম থাকবে। সেই চিন্তা থেকেই শুরু করি ডর্ম রুম ব্যান্ড দলের। ডর্ম রুম নাম কেন, জানতে চাইলে আকিব বলেন, আমরা সবাই ছিলাম ডর্মের সদস্য। আর ডর্মে যেমন যে কেউ আসতে পারে আবার চলে যেতে পারে তেমনি এখানেও যে কেউ যোগ দিতে পারে। সেই আইডিয়া থেকেই আমরা দ্য ডর্ম রুম নাম দেই।
ব্যান্ডের অন্যতম ভোকালিস্ট সুরমা। জার্মানিতে ওয়াটার অ্যান্ড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট এ পড়াশোনা শেষ করে এখন একটি সংস্থায় প্রকৌশলী হিসেবে কাজ করছেন। শেরপুর এর মেয়ে সুরমা বড় হয়েছেন সিলেট আর ঢাকাতে। ছোট বেলা থেকেই গান শিখেছেন ওস্তাদের কাছে। তিনি বলেন, আমি কাজ করি যদিও প্রকৌশলী হিসেবে কিন্তু বড় হয়েছি গান শিখে, এটা আমার জীবনের একটা প্যাশন।

ব্যান্ডের অন্যতম ভোকালিস্ট ইশরাতুল ইসলাম মাত্র কয়েক বছর আগে জার্মানিতে এসেছেন, পড়াশোনা করছেন হোখশুলে নিডাররাইন এ। ব্যান্ডের নবীনতম সদস্য ইশরাত বাংলাদেশেও ব্যান্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ফলে নতুন দলে মানিয়ে নিতে কোন সময় লাগেনি। তিনি বলেন, সাধারণত ব্যান্ডগুলো নিজস্ব ধারায় গান করে। তবে আমরা শ্রোতাদের কথা চিন্তা করে নানা ধরণের গান করে থাকি। নব্বই দশকের ব্যান্ড এর গান শুনে বড় হয়েছেন ইশরাত। তবে চলতি ধারার গানগুলোও ভালোভাবে জানেন। তিনি বলেন, কিছু গান আছে যেগুলোর আবেদন কোনদিনও হারায় না। তাই পারফর্ম করতে গেলে আমরা চেষ্টা করি নতুনের সঙ্গে পুরনোর একটি মেলবন্ধন ঘটাতে।
ব্যান্ডের কনিষ্ঠ সদস্য ও গিটারিস্ট ওমায়ের ইবনে জাফর। হোখশুলে রাইনভাল এর ছাত্র ওমায়ের আগে থেকেই গিটার বাজাতে ভালোবাসতেন। নতুন ব্যান্ড দলেও তাই গিটার বাজিয়ে যান। যে কোন প্রোগ্রাম থাকলে ডুইসবুর্গ থেকে চলে যান দলের সঙ্গে যোগ দিতে। ব্যান্ডের সকলের সঙ্গে তার খুব ভাব এবং ডর্ম রুমের অংশ হতে পারে তিনি খুব খুশী বলে জানালেন।
ব্যান্ড করাটা এখানে সহজ নয়, একেতো খরচের ব্যাপার তার ওপর প্রাকটিসের জায়গাও লাগে। একেকটি শো করতে হলে কমপক্ষে দুইদিন প্রাকটিস করতে হয় বলে জানান আকিব, যেটা পড়াশোনা আর চাকরির মধ্যে ম্যানেজ করা কঠিন। এরপরও দ্য ডর্ম রুম তাদের কাজ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আগামী বছরের শেষ নাগাদ তারা নিজেদের নতুন গান বের করতে চায়। সেটা সম্ভব হলে প্রবাসী বাংলাদেশীদের সাংস্কৃতিক জগতে একটা মাইলস্টোন হয়ে দাঁড়াবে।